শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষর করেন। ভর্তুকি সমন্বয়ে গ্যাসের নতুন এ মূল্য নির্ধারণ বলে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের এই দাম কার্যকর করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
গত ১২ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। এর এক সপ্তাহ না যেতেই বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম।
প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। আর শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।
এছাড়াও ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে) খাতে গ্যাস প্রতি ঘনমিটারে দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ দশমিক ৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়াও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগে প্রতি ঘনমিটারের দাম ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার দাম আগের মতোই ৯৯০ টাকাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দুই চুলার দাম ১০৮০ টাকাই আছে। সিএনজিতেও প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং চা শিল্পের গ্যাসের দামও আগের মতো প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯৩ পয়সাই আছে। সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও আগের মতো ১৬ টাকাই রাখা হয়েছে।
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক পরিচালক খোরশেদ আলম নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, করোনার পর আমাদের শিল্প খাত আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। এই হারে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোতে উৎপাদন খরচ ৪ শতাংশ বেড়ে যাবে। এটাতে গার্মেন্টস সেক্টরের সবকিছু ঠিক রাখা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা পরিস্থিতি কতটুকু মোকাবেলা করতে পারবো, মার্কেটে টিকে থাকতে পারবো কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এটা খুবই দুঃখজনক। ’
নিত্যপণ্যের ওপর এটা কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের এই দাম বাড়ার ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এটা জনজীবনে প্রভাব ফেলবে। ’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘এর ফলে শিল্প খাতে গ্যাস বিল বাড়বে। শিল্পে প্রভাব পড়বে। তবে লাভবান হবেন পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবসায়ীরা। ’
এদিকে গত ৯ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে তেল ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে।
এর আগে গত বছরের জুনে গ্যাসের মূল্য ২২.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই সময় সার উৎপাদনে ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ (বৃহৎ শিল্পে ১১.৯৮ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১.৭৮ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০.৭৮ টাকা, চা শিল্পে ১১.৯৩ টাকা), বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।